“Don’t let the bastards grind you down.”
স্বর্ণময়ী’, কী মায়ালু জাদুমাখা একটা নাম! ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই নরম হাসিতে ভেসে যাওয়া বুদ্ধিদীপ্ত মেয়েটা আত্মহনের মতো বোকামি করতে পারেন। কেন করলেন এমন বোকামি? কেন গেলেন তিনি ওই পথে? কে তাকে প্ররোচিত করেছে; যার জন্য তিনি বাধ্য হলেন আত্মহননে? এই আত্মহত্যা নিয়ে যার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, শুনতে পাচ্ছি তার খুঁটির নাকি ব্যাপক জোর। কাজেই এটা মোটামুটি নিশ্চিত, এমন জঘন্য অপরাধ করেও অভিযুক্ত দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকবে। বছরের পর বছর এমনটাই আমরা দেখে অভ্যস্ত। আজ পর্যন্ত যৌনহয়রানির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির উদাহরণ কি আমরা ঘটতে দেখেছি?
আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে বলবেন প্লিজ।
কোথাও আর্টিকেলে পড়েছিলাম, একটা সমাজ কতটা উন্নত সেটা বোঝা যায় সেই সমাজে নারীর অবস্থান কতটা স্বস্তিময়-উন্নত তার ভিত্তিতে। উন্নত সমাজের শর্ত হিসেবে অবশ্যই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রয়েছে– কিন্তু নারীর উন্নত অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের মতো দেশে বিকৃতমনষ্ক কিছু মানুষাকৃতির পশুর কারণে সে অবস্থান নিরন্তর টলে যায়। যেন সেটা সোনার পাথর বাটি। বাস্তবে সোনার পাথরবাটির অস্তিত্ব আছে, কিন্তু আমাদের মতো দেশে নারীর জন্য কর্মক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশই যেন কুমিরভরা জলে সন্তরণের মতো। সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না, তাই আমরা জানতেও পারি না।
নিজেকে প্রমাণের জন্য নারী-পুরুষ দুজনকেই পরিশ্রম করতে হয়। নারীর জন্য বাড়তি আপদ তার শরীর– যার জন্য প্রায় সব কর্মক্ষেত্রেই অসুস্থ-বিকৃতমনষ্ক পুরুষের থাবা বাঁচিয়ে তাকে চলতে হয়। কাগজে স্বাক্ষর করলেই যদি সভ্য হওয়া যেত– তাহলে কোনো সমাজেই আড়ালের এমন জান্তব পশুত্বের রাজত্ব থাকতো না।
কোনো কর্মক্ষেত্রে বিকৃত অসুস্থমনা কেউ থাকলে– সভ্যসমাজের দস্তুর মেনে তার শুভাকাঙক্ষীদেরই তো উচিত চিকিৎসাযোগ্য পর্যায়ে থাকলে সংশ্লিষ্টজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বা তার আচরণ শাস্তিযোগ্য হলে সেটা নিশ্চিত করা। তা না করে সেই অসুস্থতাকে আরো বাড়তে দেওয়া, আরেক ধরনের মনোবৈকল্য। এবং এই আচরণ মারাত্মক অন্যায়। এরা দুপক্ষই প্রায় নীরবে এমন অন্যায় অপরাধ করে চলে। যার জন্য স্বর্ণময়ী আত্মহননে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তার বিকৃতমনের খবর না কি অনেকেরই জানা ছিল– এরকম একজনকে কেন পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে বা হচ্ছে? দেশের প্রচলিত আইনে যৌনহয়রানিকে কি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না? তার জন্য কোনো শাস্তির বিধান নেই? না কি প্রবাদ উলটে – বিদ্বান দুর্জন হলেও সে পরিত্যাজ্য নয়, এমন বোধে আশকারা দেওয়া জায়েজ?
যে সমাজ এমন অসুস্থতাকে পেলেপুষে রাখে, সেই সমাজে নিজেকে রক্ষার জন্য একজন নারীকে কোমলমনের হলে চলে না স্বর্ণময়ী! নিজেকে ধ্বংস করা তো নয়ই। আপনি সেটাই করলেন। গতকাল থেকে আপনার হাসিমাখা মুখটা ভুলতে পারছি না। পরজন্মে আমার বিশ্বাস নেই বোনটি–আমরা একবারই মানবজন্ম পেয়ে পৃথিবীতে আসি– কেন সেই অমূল্য মানবজন্মকে অন্যের অন্যায়ের মাশুল গুণতে হবে? দেশের তাবত কর্মক্ষেত্রের নারীর জন্য স্বর্ণময়ী নিজেকে ধ্বংস করে বোকামির যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন– তা থেকে শিক্ষা নিন বর্তমান ও আগামীর স্বর্ণময়ীরা। সবিনয় অনুরোধ রাখছি, কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলে সেটা চেপে না রেখে অঙ্কুরেই বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটনে আগুয়ান হোন। কারো সঙ্গে সেরকম কিছু ঘটলে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন– আত্মহত্যা অন্যায়ের সমাধান হতে পারে না।
কুকুর কামড়াতে এলে কি করবেন আপনি? পথে নামা বন্ধ করে দেবেন না কি তার জন্য মোক্ষম দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা করবেন? হ্যাঁ, সেটাই করুন– কষে মারুন– হোক সেটা লাথি– থাপ্পর কিংবা ডাণ্ডা। গোড়াতেই থোতামুখ ভোঁতা করতে সরব হোন – দশজনে জানুক। দিনের পর দিন অসুস্থ অসভ্য বক্তব্য না সয়ে তার জবাব দিন। মুখবুঁজে অপমান সয়ে ‘গুডগার্ল’ হওয়ার চেয়ে অপমানের প্রতিবাদ করা ‘বাজে মেয়ে’র ট্যাগওয়ালা মেয়েটিকে/বোনটিকে আজকের সমাজে অনেক বেশি দরকার। আমরা চাই না আর কোনো স্বর্ণময়ী এভাবে জীবন দিক। তার জন্য যুথবদ্ধ হোন। আপনার/আপনাদের পাশে সুস্থবোধ বুদ্ধির পুরুষদেরও পাবেন, নিশ্চিত থাকুন। নিজেকে একলা ভেবে আত্মহননের বোকামি করবেন না প্লিজ! Just “Don’t let the bastards grind you down.”

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন