নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আর্জেন্টিনা এবং বিশ্ব ফুটবলের জগৎকে আনন্দ বিলিয়েছেন লিওনেল মেসি। ফুটবলের জগতে তিনি অনেকটা সময় পার করেছেন। বয়সের এমন একটা পর্যায়ে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন, যখন মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর মোহ থেকে সরে এসে বিদায় বলাই তাঁর জন্য উত্তম। কখন থামতে হবে, এটা জানা জরুরি। সম্ভবত মেসি সেটা জানেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত লক্ষকোটি ভক্ত দর্শকের জন্য বেদনার হলেও আমি বলবো তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফুটবলের ইতিহাসে লিওনেল মেসি বহু স্বর্ণালী সময় যোগ করেছেন। স্বদেশ আর্জেন্টিনাসহ পৃথিবীময় তাঁর ভক্তদের কখনও গর্বিত করেছেন কখনও বা বেদনায় ভাসিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের হার জিতের রোলারকোস্টারের দীর্ঘ সফর তাঁর শেষ হলো। তাঁর বিদায়ের ক্ষণটিও ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে বুঝি লেখা থাকবে।স্বদেশের মাঠে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। ম্যাচটি ছিল আবেগে ভরা: তিনি জোড়া গোল করে দলকে জয় এনে দেন এবং ম্যাচ শেষে দর্শকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে বিদায় জানান। মাঠে প্রবেশ করেছিলেন সন্তানদের হাত ধরে, জাতীয় সংগীতের সময় চোখ বেয়ে নেমেছিল অশ্রুধারা।
তিনি বলেছেন, এই ম্যাচটি তাঁর জন্য “বিশেষ” কারণ এটি ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচ। যদিও ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেননি, তিনি জানিয়েছেন যে নিজের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তাঁর স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোও একটি আবেগঘন পোস্টে লিখেছেন:
“তোমার প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি অর্জনে আমরা গর্বিত। আমরা তোমাকে ভালোবাসি, মেসি।”
বিশ্ব ফুটবলে তাঁর অবদান, তাঁর জাদুকরী পাস, গোল, নেতৃত্ব, সবই ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাঁর বিদায়ের মুহূর্তটিও নিদারুণ এক আবেগের স্মৃতি হয়ে থাকবে ফুটবলপ্রেমী দর্শকের মনে। বিদায়ের দিনে মেসি তাঁর তিন ছেলেকে পাশে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তার মা এবং স্ত্রী গর্বের সাথে স্ট্যান্ড থেকে দেখেছেন, সেই মুহূর্তকে। পুরো স্টেডিয়াম তাঁর নামের কলরবে ভরে ওঠে। আকাশ জুড়ে রটে যায়, আজ ফুটবলের এক জাদুকর অবসর নিতে চলেছেন। ইথারে ইথারে প্রতিধ্বনিত হয় বিদায়ের বিষণ্ন সুর। মেসির চোখ বেয়ে নেমে আসা অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে যখন তিনি সেই অবিশ্বাস্য যাত্রার ভার অনুভব করেন। তাঁর পাঁজরের অনেকটা জুড়েই যে ফুটবল! তার বৃত্ত থেকে সরে দাঁড়ানো বুকে তীব্র ব্যথা ছড়াবে না তাই কী হয়। সেই ব্যথার এমন বিরল অনুবাদ সত্যি দেখার মতো। পরিবার এবং লক্ষ লক্ষ ভক্ত বেষ্টিত মেসি ফুটবলের সবচেয়ে সুন্দর বিদায়ী দৃশ্যের জন্ম দিয়ে বিদায় জানালেন ফুটবলকে।
বিদায় লিওনেল মেসি। আমার প্রথম প্রিয় দলটি হলো ইতালি। দ্বিতীয় স্থানে ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ সময় মেসি তাঁর খেলা দিয়ে আমার মতো লক্ষ কোটি দর্শককে মাতিয়ে রেখেছিলেন। কত সময় তাঁর পারফর্মমেন্স পছন্দ না হওয়ায় ক্ষোভ ছুঁড়ে দিয়েছি হাজার মাইল দূরত্বের মাঠে খেলতে থাকা মানুষটির উদ্দেশ্যে। অবলীলায় কটুক্তি করেছি, ভাব ধরেছি যেন নিজে মাঠে নেমে এক তুড়িতে জিতিয়ে দেবার কতই না ক্যারিশমা দেখানো একজন! কিন্তু আপনার আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর দিনটিতে সেসবের বিন্দুবিসর্গ ছিল না বিশ্বাস করুন। আপনার বিদায়ের দিনটিতে প্রায় ৮,৯৮৬ কিলোমিটার দূর থেকে আপনার লক্ষ কোটি ভক্তের একজন হয়ে আন্তরিক ভালোবাসা নিয়েই আপনার বিদায়কে উদযাপন করছি। ফুটবলার মেসিকে আর মাঠে দেখতে না পাওয়ার কষ্টটা ভুলে যাবো ব্যক্তিগত জীবনে আপনাকে পরিবারের সঙ্গে আনন্দিত দেখে। নিরন্তর ভালো থাকুন আপনি। পরিবারের ছায়ায় হাসি আনন্দে কাটুক আপনার আগামী দিনগুলো। আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি প্রিয় মেসি!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন