স্মৃতিমেদুর এক সরল, আনন্দ ভ্রমণ
আমাদের জীবনের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কাটানো ভালো সময়গুলো নিয়ে স্মৃতিচারণের সুযোগ কতবারই বা আসে? কিংবা ব্যস্ততা ভুলে সেসব ভাববার অবকাশই বা যেচে কজন হাত পেতে নেই? সংসারে বা আমাদের আশপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের ওপর ভালোবাসা উপুড় করে দেন, তারা যে কেউ হতে পারেন। হতে পারেন রক্তের সম্পর্কের, পারিবারিকসূত্রে চেনা বন্ধু, দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী, অথবা হয়তো এমন কোনো অজানা মানুষ যিনি বিপদের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা কি সেই মানুষটিকে সেভাবে মনে রাখি? নাকি বিপদ কেটে গেলে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যান? কখনো কি এটা ভাববার ফুরসত আমাদের হয়, পেয়ে যাওয়া কারো কোনো ছোট্ট উপকার আমার/আমাদের জীবনের বাঁক বদলে দিয়েছিল। জানাই তাকে তার প্রাপ্য কৃতজ্ঞতাটুকু?
মানছি, জীবন আমাদেরকে নানা পর্যায় দিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে, যার ফলে এসব স্মৃতিগুলো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়, যখন আমরা শুধুই টিকে থাকার যুদ্ধের মধ্যে হারিয়ে যাই। হয়তো মনে মনে নিরন্তর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নত থাকি সেই মানুষটির প্রতি- কিন্তু বাস্তবতার কারণে তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কিন্তু যদি সে সুযোগটা সামনে এসে দাঁড়ায় তখন যেন মিছে অজুহাতে অপার্থিব সেই সুযোগটিকে হাত গ'লে পড়ে যেতে না দেই। হুট করে এমন একটা তামিল সিনেমা দেখার সুযোগ হলো যার গল্পটি এই বাস্তবতার কথাই কানে কানে বলে গেল... সিনেমার নাম Meiyazhagan
Meiyazhagan আমাদেরকে আহ্বান জানায় একটু থেমে পিছনে তাকাতে, খুঁজে বের করতে সেইসব মানুষদের যারা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন, কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা ছাড়া। চেষ্টা করো খুঁজে পেতে, অথবা অন্তত মনে করতে, সেই মানুষদের যে বা যারা কঠিন সময় আপনার পাশে ছিলেন। যার কারণে জীবন পৌঁছেছে সফলতম এক বাঁকে।
যখন চারদিকে নেতিবাচকতা, খুনজখমের মচ্ছব, তখন Meiyazhagan এক সতেজ বাতাসের মতো এসে আমাদের মনে করিয়ে দেয় এখনো ভালো মানুষ আছে, এখনো আশা আছে, এখনো ইতিবাচকতা আছে, এবং এখনো কিছু নিঃস্বার্থ মানুষের ভালোবাসা এই পৃথিবীতে অস্তিত্ব ঘোষণা করে চলেছে। যখন আপনি এমন অনুভব করবেন, সেটিকে হারিয়ে যেতে দিবেন না। কারণ মানুষ হিসেবে, এটা-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ--.ভালোবাসা খোঁজা। এবং সেটা পেলে তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞ থাকা।
আজকালকার সিনেমায় সহিংসতা আর অশ্লীলতা যেন ডালভাত, সেখানে Meiyazhagan সেই চৌহদ্দির একদম বাইরে থেকেও দর্শকমাত্রেরই মন জয় করে নেয় তার কাহিনি, পরিচালনা, আর অভিনয়ের দাপটে। কী যে এক শান্তি শান্তি ভাব ছড়িয়ে দেয় সিনেমাটি-- অন্তত আমার সেরকমই লেগেছে Meiyazhagan দেখে। অতীতের স্মৃতি, সম্পর্ক, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সব মিলিয়ে এটি এক মানবিক গল্প, যা শুধু গল্প নয়, এক অপার্থিব অনুভূতি।
প্রতিটি চরিত্রই নিপাট সরলতা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রধান চরিত্র দুটো(Karthi ও Arvind Swamy) । দুই তুখোড় অভিনেতা অদৃশ্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন বুঝি-- পর্দায় কে কতটা নিখুঁত নৈপণ্যের ছোঁয়ায় আমাদের মাত করবেন। সত্যি বলতে দুজনই- কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। অনেকদিন মনে থাকবে ওদের জীবনঘেষা অভিনয়। এছাড়া, কোনো বাড়তি নাটকীয়তা না থাকাটা এই সিনেমার আরেকটা প্লাসপয়েন্ট।
যারা বিশ্বাস করেন সহজ-সরলতাই সৌন্দর্য, তাদের জন্য Meiyazhagan, এ যেন এক আনন্দ ভ্রমণের সঙ্গী হওয়া, যা আপনাকে স্মৃদিমেদুর পথে পথিক হতে বাধ্য করবে। ভ্রমণ শেষের তৃপ্তি নিয়ে হয়তো আপনি মনে মনে তালিকা করতে বসবেন-- কার কার কাছ থেকে কি কি উপকার পেয়েছিলেন। এমন কোনো মানুষ কী আছেন আপনার জীবনে যার কাছ থেকে উপকার পেয়েও তাকে সামান্য কৃতজ্ঞতাটুকু জানানো হয়নি? থেকে থাকলে আর বিলম্ব নয়-- তাকে বা তাদের জানিয়ে দিন আপনার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। অন্তত জাদুকরি ছোট্ট একটা বাক্য- থাঙ্কিউ!
Meiyazhagan টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা এমন এক মানবিক ছোঁয়ার সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।
ছবিসূত্র: অন্তর্জাল

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন