'বুড়ো শালিকের ঘোড়ে রোঁ'




“জুলাই সনদ স্বাক্ষর বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসার প্রমাণ: এখন কাজে প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা সেই সভ্যতা অর্জন করেছি।”

বাংলাদেশে সংঘটিত ২০২৪-এর জুলাই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিশেষ করে বর্হিবিশ্বে, বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই যাদের– তারা হয়তো ভাবতে পারেন, আমাজনের জঙ্গল থেকে একদঙ্গল শিম্পাঞ্জি বেরিয়ে এসে বুঝি এই বিবৃতি দিয়েছে।

পৃথিবীতে এমন গুটি কয়েক জনগোষ্ঠী আছে, যারা স্বেচ্ছায় যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করে। তারপরও তাদের অসভ্য বলা যাবে না– নিজের ভূখণ্ড আর পূর্বজদের প্রতি তাদের সকৃতজ্ঞ ভালোবাসা, তাদের মানবিকতাবোধ, প্রকৃতির প্রতি আকণ্ঠ কৃতজ্ঞতা বরং সভ্য বলে বড়াই করা বিপুল সংখ্যক মানুষকে লজ্জায় ফেলে দেবে। মনে হতে পারে, ওদেরই মতো কোনো জনগোষ্ঠী নিজেদের বোকামি বুঝতে পেরে শেষমেশ সভ্য হয়ে বুঝি এমন ঘোষণা দিয়েছেন– না, সে ভাবনাও সঠিক নয়।

জীবনের প্রায় পঁচাশি বছর পার করে দেওয়ার পর সভ্য হওয়ার এই দাবির জানানদার হলেন একজন সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী,আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া মানুষ। যিনি আবার বাংলাদেশে অন্তবর্তীকালীন সরকারের 'লাড্ডুগোপাল' হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। জি, ঠিক ধরেছেন, নব্য এই সভ্যজনটি হলেন তথাকথিত জুলাই বিপ্লবীদের নয়নের মণি, মোহাম্মদ ইউনুস! এত বিদ্যা, দেশ বিদেশের এতশত পুরস্কার- স্বীকৃতি লবিং, কিছুই তাকে সভ্য বানাতে পারেনি এতদিন। ২০২৫ এ এসে তিনি এক তথাকথিত দলিলে স্বাক্ষরের বিনিময়ে সভ্য হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের অবস্থানগত সত্যিটা নিজমুখে স্বীকার কয়জনে করতে পারেন, বলুন দেখি? আপনি পারবেন? আছে সেই সততা?

কী বললেন? আপনার পাপী মনে ঝপাং করে প্রশ্ন জেগে উঠেছে। করুন শীঘ্রিই প্রশ্ন করুন– প্রশ্ন করবার চর্চাটাই তো নেই আমাদের। প্লিজ শুট্।

-ইয়ে মানে বলছিলাম, তিনি যে অসভ্য ছিলেন– তথ্যটা   নোবেল শান্তি কমিটি জানতো না?

ভ্যালিড প্রশ্ন বটে।

কবি কবি চেহারা, কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ– আপনার অস্থিরতা দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু বলতে চান?

- এমন বাণীর পেছনে কেমন কেমন গন্ধ পাচ্ছেন না? ভেবে দেখুন,পাঞ্জাবিওয়ালার দাবি অনুযায়ী ২০২৫ সালের অক্টোবরে এসে বাংলাদেশ সভ্য হচ্ছে। তারমানে ২০২৫ এর সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্কুল-কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে অফিস-আদালতসহ দেশ জুড়ে অগণিত মানুষের ওপর যত অন্যায় হয়েছে-- যত জঙ্গিপনা–খুন জখম- লুটপাট হয়েছে সেগুলোকে অসভ্য সময়ের তকমা দিয়ে জায়েজ করার ফন্দি নয় তো? তার ওপর ঝুলাই সনদের খোঁচায় বিনা পরিশ্রমে বাংলাদেশের অতীত অর্জনকে তামাদি করার ষড়যন্ত্রে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়াও হলো।

আপনার গন্ধ পাওয়াটা অন্যায় নয়। বিগত দেড় বছরে সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়া দেশের ‌উন্নয়নে অর্জনহীন কর্মকাণ্ডে এমন ভাবনা মনে আসা খুব স্বাভাবিক। তবে ব্যাপারটা এত সহজ ভাবছেন কেন! মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের ১৮কোটি মানুষ ‘তথাকথিত জুলাই সনদ’ এ স্বাক্ষর করেননি। কারা এই সনদে স্বাক্ষরের জন্য উৎসাহী ছিল খতিয়ে দেখুন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সমৃদ্ধি- অস্তিত্ব যাদের গাত্রদাহের কারণ, তারাই এই অবৈধ সনদ স্বীকার করবে এবং তার জন্য যে দায় সেটাও তাদের বহন করতে হবে।

কেন এই ‘তথাকথিত জুলাই সনদ’ অবৈধ? কারণ এই সনদ নির্বাচিত বৈধ কোনো সরকারের মাধ্যমে হয়নি। এর জন্ম হয়েছে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে। যেটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেনি। ২০২৪ এর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক সংকট এই ম্যান্ডেটহীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজন তৈরি করেছিল। অন্তবতীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা। প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সংবিধান রক্ষা করা। সংবিধানে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার অনির্বাচিত অন্তবর্তী সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তারা কি সংবিধান হস্তক্ষেপের কাজটি করেছে? হ্যাঁ, জুলাই সনদ তৈরিতে তারা সেটা করেছে– যা আইনগত নয়, নৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও যা অন্যায়। বাহাত্তরে প্রবর্তিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ ও ১৪২ অনুযায়ী কোনোরকম সংশোধনের জন্য সংসদীয় প্রক্রিয়া ও নির্দিষ্ট সংখ্যা গরিষ্ঠতা দরকার। অর্থাৎ অন্তবর্তী সরকার সংবিধান রচনার বা সংশোধনের অধিকার রাখে না, বরং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই তার কাজ। সেপথে না গিয়ে এই সরকার জুলাই সনদ তৈরির মতো গর্হিত কাজ করে কোন মুখে নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছে!

আয়রনি দেখুন, যে সংবিধান অনুযায়ী ইউনুস বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির অধীনে শপথ নিয়ে ক্ষমতায় বসলো– সেই সংবিধানের অসম্মান করেই তারা তৈরি করেছে জুলাই সনদ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যার জন্য নির্ধারিত রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান। এবং সেটা মৃত্যুদণ্ড।

ন্যাংটার থাকে না কাপড় হারানোর ভয়– ইউনুস বাহিনীরও সে ভয় নেই। এই ন্যাংটার দল বাংলাদেশকে টেনে পেছনে নেওয়ার উৎকট এক খেলায় মেতেছে। তাদের কোনোভাবেই- কোনো সংজ্ঞাতেই কি সভ্য বলা যায়? একেবারেই না।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাদ যাবে কি মুজিব(বাদ!)?

'সখী, ভালোবাসা কারে কয়!'

শান্তির ছদ্মবেশে কি স্বাধীনতাহরণ?