নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে...




প্রায় বছর পনেরো পর আরো একবার অপরিচিত গায়কের গান শুনে মুগ্ধতার পর, শিল্পী সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হতে হলো। বছর পনেরো আগে যাঁর গায়কীতে প্রথমে মুগ্ধ, এবং পরে শিল্পী সম্পর্কে জানার পর মন বেদনায় ভরে গিয়েছিল; তাঁর নাম বিক্রম সিং খাঙ্গুরা। বিক্রমের গলায় শোনা, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে…’ আজও আমার মন খারাপিয়া সময়ের সঙ্গী। দ্বিতীয়জন সদ্য প্রয়াত জুবিন গার্গ। নিজের জানার সীমাবদ্ধতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলছি; “Tujhse Door Main Ek Hi Wajah Ke Liye Hoon/ Kamzor Ho Jaata Hoon Main” শোনার আগে এই শিল্পী সম্পর্কে আমার কিছুই জানা ছিল না। গানটা শুনে ভালো লাগায় শিল্পী সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বোকা বনে গেছি। গত দুদিন ধরে এই গানের ধুনটাই মাথায় ঘুরছে অনবরত।

বিক্রম এবং জুবিন দুজনই অকালপ্রয়াত। কবি, সঙ্গীতশিল্পী এবং আঁকিয়ে বিক্রম সিং মারা গেছেন মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে। সেদিন বিক্রম তাঁদের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে একাই ছিলেন। সঙ্গীতজ্ঞ বাবা মোহন সিং শান্তিনিকেতনের বাইরে ছিলেন। গিয়েছিলেন গানের অনুষ্ঠানে , সঙ্গে ছিলেন ছোটো ছেলে আর ছেলেরবউ। বিক্রম তাঁর আঁকার সরঞ্জাম, কবিতার বই-খাতা- গানের অজস্র স্মৃতি ফেলে ঝিঁঝিধরা অজ্ঞাত রোগের ভুল চিকিৎসায় পাড়ি জমান দূরপরবাসে। যেখানে গেলে ফেরার আর পথ থাকে না কোনোকালেই।

নিজেকে ধর্মহীন- কাঞ্জনজংঘা বলা জুবিন ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। মানুষ-ইতরপ্রাণী আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁর ধর্ম। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে তাঁকে অকালে বিদায় নিতে হলো। তাঁর মৃত্যুতে মানুষের শোকের যেরকম দৃশ্য/খবর চোখে পড়েছে সেটা সত্যিই অভাবনীয়।

নশ্বর শরীর ছেড়ে একসময় চির বিদায় নিতে হয় মানুষকে, এটাই নিয়ম। পেছনে পড়ে থাকে যার যার কাজের দলিলদস্তাবেজ। বিক্রম আর জুবিনও তাঁদের কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবেন বহুদিন।

তাঁদের গানে ডুবে যেতে যেতে, বহুদূরে থাকা কেউ হয়তো বাতাসের বুকপকেটে গুঁজে দেবে অদৃশ্য কালিতে লেখা ভালোবাসার চিঠি। তাতে লেখা– নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে– ফিরসে হো তো গ্যায়ি প্যায়ার তুমসে.. বহুত বেশুমার, তুমসে…




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাদ যাবে কি মুজিব(বাদ!)?

'সখী, ভালোবাসা কারে কয়!'

শান্তির ছদ্মবেশে কি স্বাধীনতাহরণ?