মগ্ন যাঁরা লেবার অফ লাভে
মে মাসের এক তারিখে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে লেবার ডে পালিত হয়। ব্যতিক্রম হলো: যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। এই দেশগুলোতে লেবার ডে উদযাপিত হয় যথাক্রমে ১ সেপ্টেম্বর- যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়, মার্চের দ্বিতীয় সোমবারে অস্ট্রেলিয়ায় এবং অক্টোবরের চতুর্থ সোমবারে নিউজিল্যান্ডে। একটা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখার পেছনে শ্রমিকের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের সংগ্রামের ইতিহাসকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এই দিনটি পালিত হয়। যে ইতিহাসের শেকড় প্রোথিত রয়েছে ১৯ শতকে শেষভাগে। কমবেশি সবার সেটা জানা।
দিনটির প্রতি যথাযথ সম্মান জানাচ্ছি।
লেবার ডে আমাদের শেখায় শ্রমের মর্যাদা দিতে। কিন্তু এমন এক শ্রেণির শ্রমিক আছেন, যাঁদের কাজের কোনো বাঁধাধরা সময় নেই, ছুটি নেই, এমনকি স্বীকৃতিও প্রায় নেই—তাঁরা হলেন পরিবারের অদৃশ্য মেরুদণ্ড, একজন নারী, একজন মা।
একজন মা প্রতিদিন যে পরিমাণ শারীরিক, মানসিক, এবং আবেগগত শ্রম দেন, তা কোনো চাকরির বর্ণনায় ধরা পড়ে না। ভোরের আলো ফোটার আগেই তাঁর দিন শুরু হয়ে যায়। রান্না, সন্তানদের যত্ন, ঘরের কাজ, স্কুলের প্রস্তুতি, অফিসের দায়িত্ব; সবকিছু একসাথে সামলে নিতে হয় তাঁকে। তাঁর মাথায় সর্বক্ষণ ছক কষতে থাকে নানাবিধ তালিকা। তাঁর কাজের সময়সূচি, কাপড় ধোয়ার হ্যাপা, আর অসংখ্য ছোটো ছোটো দায়িত্বের ভার। অনেক পরিবারের পুরুষেরাও হয়তো এমন দায়-দায়িত্বের জোয়াল বয়ে থাকেন। কিন্তু একজন নারী, যিনি পরিবারে মায়ের ভূমিকায় থাকেন, তার তুলনায় সেটি কখনোই সমান হয় না। মাকে তাই সর্বংসহা বলা হয়।
এই মা বা নারীটিকে দিনরাত চব্বিশঘন্টা সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাঁর শ্রমের কোনো নির্দিষ্ট মজুরি নেই, নেই কোনো পদোন্নতির আশ্বাস। অথচ তাঁরই ছায়ায় থাকে একটা পরিবার, একটা ভবিষ্যৎ, ভালোবাসায় ভরপুর এক জগৎ। মায়েদের কাজ কখনো থামে না, কারণ তাঁদের শ্রম শুধু দায়িত্ব নয়, নিখাঁদ ভালোবাসার প্রকাশ।
সংসারের একজন নারীর কোনো লেবার ডে থাকে না। সেশুধু কারখানা আর অফিস পাড়ার জন্য। রান্নাঘর, খেলার ঘর, কিংবা ঘুমপাড়ানি গল্পের ভেতরে যে শ্রমের ছায়া- সেগুলোর খোঁজ কেই বা রাখে। লেবার ডে-র এজেন্ডায় মায়েদের এই নীরব, নির্বিচার শ্রমকে সম্মান জানানোর কথা লেখা হয়নি। হলে কিন্তু এই দিনটির প্রকৃত অর্থের বিস্তারে কোনো বিচ্যুতি ঘটতো না, বরং আরো অনেকটা জুড়ে ছড়াতো তার আলো।
আজকের দিনটা তাঁদের জন্যেও হোক, পরিবারের সেইসব নারী এবং মায়েদের জন্য, যাঁরা “Labor of Love” দিয়ে প্রতিদিন পৃথিবীকে একটু বেশি মানবিক করে তোলেন।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন