"জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার– তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার-আমার"
‘Past Lives’ এর গল্পকে আউট অফ বক্স জাতীয় কিছু বলা যাবে না হয়তো— পরিচিত গল্পের আবর্তে গড়িয়েছে কাহিনির আখ্যান। সাধারণ সেই গল্পকে অসাধারণভাবে উপস্থাপনার এক সেলুলয়েডিয় উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যায় এটিকে। সিনেমাটি দেখার রেশ মনে থেকে যাবে অনেকদিন। যেমনটা আজও মনে গেঁথে আছে ‘Labour of Love', ‘Three of Us’-এর রেশ। পাস্ট লাইভসের উড়ানের মধ্যে লুকিয়ে আছে সাধারণ ঘটনাকে অসাধারণভাবে হাজির করার চমক। যার আকর্ষণে দর্শক ব্যাকগ্রাউন্ডে গেইস গেইমে মগ্ন যুগলের সঙ্গী হয়ে উঠবেন। দর্শক মনেও প্রশ্ন তৈরি হবে শুরুর দৃশ্যে দৃশ্যমান তিন চরিত্রকে ঘিরে। সামান্যকে যিনি অসামান্যের মহিমায় উত্তীর্ণ করতে পারেন বাজি তার পক্ষে— কাহিনিকার সেলিন সং(Celine Song) পরিচালকের আসনে বসে সেই বাজিটা জিতে নেন তাঁর নিজস্ব দক্ষতা আর টিম মেটদের মুন্সিয়ানার জোরে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র দুটির কথা বার বারই বলতে হয়।
ভালোবাসা, বিচ্ছেদ আর দ্বিতীয় সুযোগের আকুতি, পাস্ট লাইভসের হৃৎপিণ্ড জুড়ে অনুরণন তুলে গেছে। যার স্পর্শ দর্শক মনেও অভিঘাত তৈরি করে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নোরা(Greta Lee) এবং হে সং(Teo Yoo), শৈশবে যাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নিবিড় বন্ধুত্ব। নোরার পরিবার দক্ষিণ কোরিয়া ছেড়ে কানাডা চলে গেলে তাদের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে যায়।
সুদীর্ঘ চব্বিশ বছর পর আবার তাদের মুখোমুখি দেখা হয়। তার আগে অন্তর্জালের সূত্রে তারা একে অন্যের হদিশ পায়।
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর অন্তর্জালের হাত ধরে তাদের মধ্যে যখন যোগাযোগ শুরু হয়– তখন পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকা দুই বন্ধু, বিশেষ করে নোরা, যে তখন নিউ ইর্য়কে স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত- হে সং আপাদমস্তক একজন কোরিয়ান। তাদের ভেতর চলমান আবেগের রাশ টানে বাস্তববাদী নোরা। নিজেকে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হয়। বোঝাপড়ার মাধ্যমে দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে তখনকার মতো যোগাযোগ ছিন্ন করে। বারো বছর পর হে সং তার শৈশবের প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে দেখা করতে নিউ ইর্য়কে আসে। ততদিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। পুরনো বন্ধুত্ব আড়মোরা ভেঙে আসনপিড়ি হতে চাইলে জটিলতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা উঁকি দেয়। ভাবনার দরজায় ‘যদি অমন হতো’রা ভিড় জমায়। সেই ভিড়ে অপ্রস্তুত হতে হতেও আর্থার সপাটে জড়িয়ে ধরতে পারে নোরাকে— আর হে সং -এর সর্বস্ব জুড়ে জীবনানন্দ ফিসফিসিয়ে ওঠেন–
“জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার–
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার-আমার!"
সেলিন সং অত্যন্ত দরদের সঙ্গে পাস্ট লাইভসে সংবেদশীল আবহাওয়া তৈরি করেছেন। সপাটে যা দর্শকের বুকে সুখের মতো ব্যথা ছড়ায়। সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফিও দারুণ মনোমুগ্ধকর। সিউল এবং নিউ ইয়র্ক সিটির সৌন্দর্য দারুণ দক্ষতায় দেখানো হয়েছে। সিনেমার বাতাবরণের সঙ্গে মানানসই সাউন্ডট্র্যাক– সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এক সৃষ্টি। নোরা এবং হে সং চরিত্রে অভিনয় করা গ্রেটা লি আর তেও ইউকে অনেকদিন মনে থাকবে।
P.C. AI

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন